দেশের ছাত্র জনতা সমর্থনকারী সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারপর অন্য উপদেষ্টাগণেরা হলেন দেশের বিভিন্ন মতাদর্শের সুশীল গণ।
৮ আগষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহনের মধ্য দিয়ে, চলমান নতুন সরকারের পথ চলা শুরু। কিন্তু এ দেশের সুশীল সমাজের প্রতি জনমানুষের কোনো আস্থা নেই। তার কারণ হলো আমাদের দেশের সুশীল গণেরা বিভিন্ন মতের বিভিন্ন দলের বুদ্ধিজীবী বলে জনমানুষের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
আজকে আপনার নেতৃত্বে দেশ চলছে। এর আগে যারা ছিল। তাদেরকে জনগণ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করেছে। একজন রাষ্ট্র নায়কের বিরুদ্ধে জনগণের কখন ঘৃণার জন্ম হয়? সেখানে অনেক গুলো দোষারোপের কারণ এক হলে। এবং অনেকগুলো জনবিরোধী কাজ একসঙ্গে হলে তারপর।
বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে একাত্তরের পূর্বে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করা হয়েছিল। তার কারণ গুলো সবার জানা।
তারপর শেখ মুজিবকে হত্যার করার পরে, দেশের একটি বড়ো অংশ মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বকে বরণ করে নিয়েছিল । মেজর জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করে নিয়েছিল । সেখানে ও দেশের বড়ো একটি অংশ জেনারেল এরশাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিল ।
জেনারেল এরশাদের পতনের পর। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তখনও দেশের বড় একটি অংশ বেগম খালেদা জিয়াকে সমর্থন দিয়েছিল।তারপর ১৯৯৬ সনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। এবং পাঁচ বছর বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র পরিচালনার কারণে ২০০১ এ আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়।সেদিনও আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করেছিল। আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এবং বেগম খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হন।
২০০১ থেকে ২০০৬ অগোছালো রাষ্ট্র পরিচালনা করার ফলে জনগণ বিএনপির প্রতি ক্ষুব্ধ হতে থাকে। তারপর হঠাৎ একদিন ওয়ান ইলেভেনের মতো ঘটনা ঘটে গেলো।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান জনাব ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে দেশ চলতে থাকলো। কিন্তু সেনা শাসিত ফখরুদ্দিন সরকার জনগণের মন জয় করতে পারলেন না । পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পারলেন না। তখন জনগণের তুমুল ছাপে তড়িঘড়ি নির্বাচন দিলেন। তারপর আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলো।
আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়ার পর জনাব ফখরুদ্দিন সরকারের সয়ং ফখরুদ্দিন সহ অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমালেন। কারণ তারা অনেকেই জনগণের কাছে বিতর্কিত হয়ে যান। এমনকি তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ ও দেশ ছেড়ে চলে যান । আমার প্রিয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে নিয়ে চিন্তায় আছি।
এই ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা অর্থাৎ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামের সংগঠনের কিছু ছাত্রদের সমর্থনে আজকে আপনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান। এখানে অনেক রাজনৈতিক দলের যদিও সমর্থন আছে। তবে এই সমর্থন অল্প সময়ের জন্য। সব রাজনৈতিক দল গুলোই ক্ষমতা চায়। আর এটাই স্বাভাবিক।
আপনি সরকার প্রধান হওয়ার পর দেশের ৮০ ভাগ জনগণ আজকে আপনাকে সমর্থন করে যাচ্ছে। তা কিন্তু সীমিত সময়ের জন্য।
এছাড়া এখানে রয়েছে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল। যেমন জামায়াত, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, চরমোনাই, হেফাজত জাকের পার্টি সহ আরো বেশ কিছু ছোট ছোট রাজনৈতিক দল। এই দল গুলো আজকের সরকারকে সমর্থন দেয়ার ফলে দেশের প্রায় সবাই সমর্থন দিয়েছে। আপনি দেশের সরকার প্রধান হওয়ার ফলে আপনারও দায়িত্ব বেড়ে গেছে অনেক। যেমন –
1. দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ।
2. সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।
3. পণ্যের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা।
4. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কারীদের চাকরি। অথবা আত্ম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করন।
5. দেশের অর্থনৈতিক সচ্ছল রাখা।
6. একটি সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া।
7. দেশের খেটে খাওয়া জনগণের জন্য কর্ম সৃষ্টি সহ নানাবিধ দায়িত্ব কর্তব্য আজকে আপনার কাছে।
এই কাজ গুলো বীর দর্পে এগিয়ে যেতে পারলেই আপনি সফল। এখানে তোষামোদকারী গণ প্রবেশ করে যদি উল্টা পাল্টা কাজ শুরু করে দেয়। তাহলে আপনার সফল হওয়া নচেৎ হবে। আর উল্টা পাল্টা কিছু হলে আপনার সুনাম ও ধূলিসাৎ হবে। আপনি সহ সকল উপদেষ্টা গণ ন্যায় কে ন্যায় বলবেন। অন্যায়কে অন্যায় বললে এটাও সফলতার একটি অংশ।
তবে যাই করুন না কেন। জন মনে জনরোষের সৃষ্টি যেন না হয়। সকল উপদেষ্টাগণ এরকম একটি বিষয় মাথায় রাখবেন। মনে রাখবেন বাঙালি জাতির চরিত্র কিন্তু ভিন্ন। তাদের হাইকোর্ট ও চেনা আছে। আর প্রকট পন্ডিতিও তাদের জানা আছে। মনে রাখবেন ভুলেও যেন বাঙালির এই সরলতা এবং আপনার প্রতি যে বিশ্বাস আছে তা যেন অবিশ্বাসের বিষয় না হয়। আপনার প্রতি আমার সমর্থন আছে।
আমি ২০১১ সালেও আপনাকে নিয়ে কলাম লিখেছিলাম। কলামের শিরোনাম ছিল ” ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক বনাম খেয়ালী মানুষ”। যা সেদিন দৈনিক যুগান্তর দৈনিক বাংলা বাজার অবশেষে দৈনিক ভোরের চেতনার প্রকাশনা। বিজনেস এন্ড স্টাইল এ ছাপা হয়েছিল । ২৫ জুলাই ২০১৩ । যা আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। আমি প্রায় তিরিশ বছর ধরে লেখালেখি করে আসছি। কোনো দল বা কোনো গুষ্ঠির পক্ষে লেখালেখি করি না। সবসময় আমি আপন চেতনায় চলি। জনগণের জন্য লেখালেখি করি। আপনি নোবেলজয়ী, অর্থাৎ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর থেকেই আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে যায়। তাই এগারো সালে আপনাকে নিয়ে যে কলাম লিখেছিলাম। সেখানে এক জায়গা লেখা ছিল। বাংলার দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু। এরকম একটি কলাম আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লেখা খুবই বিপদ জনক ছিল। তারপরও আমি লিখেছি। ২০০৭ যখন আপনি রাজনৈতিক দল গঠন করতে ছেয়েছিলেন। তখনও আমি আপনার বরাবর তার বিস্তারিত চিঠি লিখেছিলাম। তার ও প্রমাণ আছে আমার কাছে। আপনার পরামর্শে এই জাতি এগিয়ে যাক। আপনার সুনাম ও খ্যাতি অক্ষুন্ন থাকুক। ভালো থাকবেন।
অথই নূরুল আমিন
কবি কলামিষ্ট ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী
২4 / ০৮/ ২০২৪
Leave a Reply