কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল পাক্কারমাথা এলাকার বড় পুকুরপাড়ে বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন শিকারিরা। শনিবারের তোলা। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল পাক্কারমাথা এলাকার বড় পুকুরপাড়ে বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন শিকারিরা। শনিবারের তোলা। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল পাক্কারমাথা এলাকার বড় পুকুরপাড়ে টিকিট কেটে বড়শি দিয়ে দিনব্যাপী মাছ শিকারের আয়োজন করা হয়। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে পাক্কারমাথা এলাকার বড় পুকুরপাড়ে মাছ শিকারের আয়োজন করা হয়। এদিকে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে মাছ ধরার বড়শি, মাছের খাবার ও মাছ আকৃষ্ট করার বিশেষ চার (টোপ) নিয়ে ব্যস্ত সময় কটেছে শিকারিদের। অনেকেই সহযোগী নিয়ে এসেছেন। শনিবার (২১ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ মাছ ধরা।
কে কয়টা ও কত বড় মাছ বড়শি দিয়ে শিকার করতে পারেনÑ তা নিয়ে চলে এক ধরনের প্রতিযোগিতা। আর এ প্রতিযোগিতা দেখতে পুকুরপাড়ে জড়ো হয় শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের শত শত মানুষ। উৎসমুখর পরিবেশে বড়শি দিয়ে রুই, কাতল, কার্ফু, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করেন মৎস্য শিকারিরা।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৫০টি সিটে ১৫০ জন মাছ শিকারি বাহারি রঙের ছিপ দিয়ে মাছ শিকার করছেন। প্রতিটি সিট ৮ হাজার টাকা করে কিনেছেন তারা। ওই এলাকায় দীর্ঘদিন পরে এ ধরনের আয়োজন হওয়ায় বিশাল এ পুকুরের পানিতে শৌখিন মৎস্য শিকারিদের দেখতে চারপাশে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
পুকুরের মালিক কামরুল ইসলাম, আমিরুল, হানিফ মিয়া, নজরুল মিয়াসহ আয়োজকরা জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্য শিকারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টিকিটের মাধ্যমে মাছ ধরার আয়োজন করা হয়েছে। পাঁচ বছর পরপর একবার সুযোগ মেলে টিকিট কেটে এ পুকুরে মাছ ধরার। ৮ হাজার টাকায় একটি টিকিটের বিপরীতে তিনজন মাছ ধরতে পারছেন। তাদের এই ১২০ শতাংশ পুকুরে ১৪ বিঘা জলকর রয়েছে এবং পানির গভীরতা রয়েছে ১৮-২০ ফুট। তাতে রুই-কাতলা-তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশিও মাছ রয়েছে। সর্বোচ্চ ৬ কেজি ওজনের মাছ পুকুরে রয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে মাছ ধরার এই প্রতিযোগিতা চলছে। নাশতা ও দুপুরের খাবার দেওয়া হয়েছে প্রতিযোগীদের।
এদিকে বড়শিতে লোভনীয় টোপ ফেলে অপেক্ষা করে মৎস্য শিকারির দল। গভীর জলের মাছ ডাঙায় তুলে আনার প্রতীক্ষার প্রহর কিছুতেই যেন শেষ হতে চায় না। তবে মাছ ধরা পড়ুক আর না-ই পড়ুক কর্মব্যস্ত জীবনে বিনোদন আর সময় কাটাতে অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন। শিকারিদের মধ্যে কেউ বড় মাছ পেয়ে খুব খুশি, আবার কেউ আশানুরূপ না পেয়ে হতাশ। তবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কম বেশি সবার বড়শিতে ধরা পড়ছে রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
জেলা শহর থেকে আসা খাইরুল ইসলাম বলেন, বড়শিতে মাছ শিকার করতে অভ্যস্ত না। তবুও চেষ্টা করছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মাছের টোপ গিলে ফেলা সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। আমার সে সৌভাগ্য হয়েছে। বড়শিতে একটি দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ উঠেছে। পাক্কারমাথা এলাকার বড় পুকুরটি এ এলাকার প্রায় শত বছরের প্রাচীন পুকুর। আমার বয়স ৪০ বছর। ছোটবেলা থেকেই শুনেছি মানুষ এখানে মাছ ধরতে আসে। যার ধারাবাহিকতায় আমিও মাছ শিকার করতে এসেছি।
পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙা ইউনিয়নের সাটিয়াদী গ্রাম থেকে আসা মৎস্য শিকারি ফজলু মিয়া জানান, তার দলে চারজন এসেছেন। তিনি বলেন সুন্দর মনোরম পরিবেশে মৎস্য শিকার হচ্ছে। সবাই মাছ পাচ্ছেন। বাজিতপুর থেকে আসা ফারুক মিয়া বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। ভালোই লাগে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে। শখ করে কয়েকজন বন্ধুসহ এই মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় এসেছি।
মাছ শিকার দেখতে আসা মেরাজ নাছিম জানান, এই এলাকায় মৎস্য শিকারের কথা শুনে এসেছেন। এ রকম মৎস্য শিকারের আয়োজন দেখে তিনি খুব খুশি।
মাছ ধরা দেখতে আসা দর্শনার্থী রাকিব মিয়া, সালিম হোসেন, ফুরকার মিয়া, মামুন মিয়া, রমজান, শামীম বলেন, ‘সবাই মিলে পুকুরপাড়ে ঘুরতে এসে মাছ ধরার এমন দৃশ্য দেখে অনেক ভালো লাগছে। তবে প্রতি বছর বিশেষ বিশেষ দিনে এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করলে আমরা আনন্দ উপভোগ করতে পারব।
যশোদল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ সুলতান রাজন বলেন, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা বিনোদনের মাধ্যম। অনেকেই মাছ ধরাকে তাদের জীবনে একটি বিশেষ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেন। আবার কারও কারও বড়শিতে মাছ ধরা নেশাতে পরিণত হয়েছে। সব মিলিয়ে এ আয়োজন মাছ আহরণ ও প্রতিযোগীদের অন্যরকম বিনোদন দিতে সক্ষম হওয়ায় বেশ জমে উঠেছে।
Leave a Reply