শুভ আহাম্মেদ নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি ? শিল্পীর গাওয়া এই অসাধারণ গানের অন্তরায় যেন লুকিয়ে আছে বাঙালি মায়ের কতনা সন্তান হারানোর আহাজারি, করুন কান্না বিজড়িত ভাষা আন্দোলন সংগ্রামের গৌরবান্বিত কতই না কষ্টের ইতিহাস ।
ঢাকা জেলার নবাগঞ্জ উপজেলার জয় কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শিকারি পাড়া আনোয়ারা বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার প্রথম প্রহরে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেশমি আক্তার ।
পরে, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শুভ আহমেদের সঞ্চালনায় ও প্রধান শিক্ষক রেশমি আক্তার এর সভাপতিত্বে মহান মাতৃভাষা দিবসে জীবন উৎসর্গ কারি সকল শহীদদের স্মরণে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় স্মৃতিচারণ মূলক বক্তব্য রাখেন অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাপস মন্ডল, দুর্জয় হোসেন ও সুশীল সমাজের পক্ষে মোজাফফর আলী প্রমূখ। এসময় উক্ত আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রতন চন্দ্র হালদার , সহকারী শিক্ষক তানিয়া ভূইয়া, শিল্পীরানী বসাক, রুপা আক্তার, সুবর্ণ আক্তার ও শান্তা ইসলাম সহ সকল শিক্ষার্থী বৃন্দ । এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক গণ, বিভিন্ন পেশাজীবী লোকজন ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ গন ।
বাঙালি মায়ের দামাল ছেলেরা ভাষার জন্য আত্মহুতি দানের এই দিনটি কিভাবে বিশ্ববাসীর কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেল তার আলোচনায় প্রধান শিক্ষক রেশমি আক্তার বলেন,
১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে । সে সময় সেক্রেটারী জেনারেলের প্রধান তথ্য কর্মচারী হিসেবে কর্মরত হাসান ফেরদৌসের নজরে আসে এ চিঠিটি । তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী রফিককে অনুরোধ করেন তিনি যেন জাতিসংঘের অন্য কোন সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন। পরে রফিক, আব্দুস সালামকে সাথে নিয়ে “মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড” নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। এতে একজন ইংরেজিভাষী, একজন জার্মানভাষী, একজন ক্যান্টোনিভাষী, একজন কাচ্চিভাষী সদস্য ছিলেন। তারা আবারো কফি আনানকে “এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড”-এর পক্ষ থেকে একটি চিঠি লেখেন, এবং চিঠির একটি কপি ইউএনওর কানাডীয় দূত ডেভিড ফাওলারের কাছেও প্রেরণ করা হয়।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ও এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়, এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ সমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
সবশেষে সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ।
Leave a Reply