আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তান যদি তাদের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর খালি করে দেয়, তবে কাশ্মীর ইস্যু পুরোপুরি সমাধান হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। তিনি জানিয়েছেন, নয়াদিল্লির পরবর্তী লক্ষ্য পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে বুধবার (৫ মার্চ) ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক থিঙ্কট্যাংক সংস্থা চ্যাথাম হাউসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
মূলত কাশ্মীর ইস্যুতে একজন দর্শকের প্রশ্নের জবাবে এ বক্তব্য দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রশ্নটি ছিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে কাশ্মীর ইস্যু ‘সমাধান’ করতে পারেন?
জয়শঙ্কর বলেন, ‘এ ইস্যুতে আমরা ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। প্রথম ধাপে আমরা (সংবিধানের) ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করেছি, এরপর কাশ্মীরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ছিল দ্বিতীয় পদক্ষেপ, তৃতীয় ধাপে আমরা সেখানে বিধানসভা নির্বাচন দিয়েছি এবং সেই নির্বাচনে প্রচুর ভোটার ভোট দিয়েছেন।’
একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি কাশ্মীরের চুরি হওয়া অংশটি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে, যা পাকিস্তানের অবৈধ দখলে রয়েছে। যখন তা হবে, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি যে, কাশ্মীর ইস্যু সমাধান হয়ে যাবে।’
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীর সংকটের সূচনা হয়। ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার পর, জম্মু-কাশ্মীর কোন দেশের অন্তর্ভুক্ত হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব জম্মু-কাশ্মীরের শেষ রাজা হরি সিংয়ের ওপর বর্তায়। তিনি নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তবে ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর দেশটির সেনারা কাশ্মীরে অভিযান শুরু করে এবং রাজধানী শ্রীনগরের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে হরি সিং ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এরপর ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করে এবং তাদের পিছু হটতে বাধ্য করে।
এরপর থেকে জম্মু-কাশ্মীরের ভৌগোলিক অংশ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বর্তমানে এর ৪৩ শতাংশ ভারতের, ৩৭ শতাংশ পাকিস্তানের এবং বাকি ২০ শতাংশ চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চীনের অধিকৃত অংশটি সিয়াচেন নামে পরিচিত।
ভারতে অন্তর্ভুক্তির পর প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা প্রদান করেন। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে, জম্মু-কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এবং ভারতের অন্যান্য রাজ্যের নাগরিক বা বিদেশিরা সেখানে জমি বা সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবে না।
তবে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্টে কণ্ঠ ভোটের মাধ্যমে বিজেপি সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে, যার ফলে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত হয়।
Leave a Reply