আমিনুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :

সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিম-মুরগী বিক্রয় করতে না পারায় কিশোরগঞ্জের কয়েকশত খামারী সংবাদ সম্মেলন করেছে। শনিবার বিকেলে জেলা শহরের উজান ভাটি রেস্টুরেন্টের হল রুমে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কিশোরগঞ্জ পোল্টি ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশন। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক মুহাম্মদ সাদেকুর রহমান সাদেক। সংবাদ সম্মেলনে সংহতি প্রকাশ করে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক ভিপি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি একে নাসিম খান,সাধারণ সম্পাদক সাইফুল মালেক চৌধুরী,সহ সাধারণ সম্পাদক মুনিরুজ্জামান খান চৌধুরী সোহেল,কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম ফকির মতি। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য মো.শহিদ মল্লিকের পরিচালনায় অন্যন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সদস্য সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম,বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ, জাতীয় যুব পদকপ্রাপ্ত খামারী মো. নুরুল আরেফিন লিংকন, খামারী হাফেজ মাও রাশিদ আহমেদ,সংগঠনের পাকুন্দিয়া উপজেলা শাখার আহবায়ক কামাল উদ্দিন ছোটন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার প্রায় ৫ হাজার পোল্ট্রি খামারীরা নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বর্তমান সময়ে এসে পৌঁছেছি। প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সরকার কর্তৃক ডিম ও মুরগীর দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিলো। এতে খামারী পর্যায়ে ডিম প্রতিটি ১০.৮০ পয়সা, ব্রয়লার ১৭০ টাকা কেজি, সোনালী ২৬০ টাকা কেজি দরে নির্ধারিত হওয়ার পরেও বাজারে ডিম ও মুরগীর উৎপাদন কম থাকায় বাজার মূল্য কিছুটা বেড়ে গিয়েছিলো। তখন সরকার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। মোবাইল কোর্ট বিভিন্ন ডিম ও মুরগীর আড়তে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ জরিমানা আদায় করে। ওই সময়ে বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে আমরা ডিম ও মুরগী বিক্রয় করতে বাধ্য হই।

বর্তমানে আমরা খামারীরা প্রতি ডিম ও মুরগীর উৎপাদনের খরচের চেয়ে অধিক নিন্ম দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। ডিম প্রতিটি ৮.২০ পয়সা,ব্রয়লার মুরগী ১৪০/- কেজি, সোনালী ২০০/- টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে খামারীরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পতিত হচ্ছে। খামারীরা পুঁজি হারিয়ে খামার বন্ধ হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এভাবে খামার বন্ধ হতে থাকলে ডিম ও মুরগীর উৎপাদনে ব্যাপক হ্রাস পাবে এবং বাজার অস্থিতিশীল হবে এবং দেশে আমিষের ঘাটতি দেখা দিবে।

শুধু তাই না সরকার কর্তৃক একদিনের বাচ্চা লেয়ার প্রতিটি ৫৭ টাকা,ব্রয়লার প্রতিটি ৫৩ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্ত দাম নির্ধারণ করে দেওয়া সত্ত্বেও বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় একটি অসাধুচক্র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লেয়ার বাচ্চা প্রতিটি ৯০-১০০,ব্রয়লার বাচ্চা প্রতিটি ৮০-৯০ টাকা দরে বিক্রয় করছে। এমনকি খাদ্য, ভ্যাকসিন ও মেডিসিনের দর ব্যাপক উর্ধ্বগতি থাকায় উৎপাদন খরচ বেড়েই চলছে। শুধু ১ দিনের বাচ্চায় বিগত ২ বছরে খামারীদের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।

এমতাবস্থায় সরকারের নির্ধারিত মূলেো বাচ্চা ও উৎপাদিত ডিম মুরগী বিক্রয় করতে পারার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি। সেই সাথে পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচাতে অবশ্যই সরকারকে কৃষি খাতের মতো পোল্ট্রি খাতকেও ভর্তুকির আওতায় আনতে হবে। সহজ শর্তে বিদ্যুতের ২০% রিভ্যাট ও ব্যাংকে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের কিশোরগঞ্জের পোল্ট্রি অধ্যাষিত খামারীদের সকল দাবীগুলো বাস্তবায়ণে আপনাদের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে জেলার কয়েক শতাধিক খামারী উপস্থিত ছিলেন। পরে খামারিদের নিয়ে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে মোনাজাত পরিচালনা করেন খামারী হাফেজ মাও রাশিদ আহমেদ।