নান্দাইলে আলোচনা-সমালোচনায় ওসি ফরিদ আহেমদের ১৬৯ দিন
-
প্রকাশিত:
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫
-
২০৮
বার শেয়ার করা হয়েছে।

নান্দাইলে আলোচনা-সমালোচনায় ওসি ফরিদ আহেমদের ১৬৯ দিন
[ * তিনবার জেলার শ্রেষ্ট পুরষ্কার পেয়েছেন ] [ * জুয়া ও মাদকের বিরুদ্ধে নামমাত্র সোচ্চার ]
[ * অন্যান্য অপকর্মে নিয়েছেন মোট অংকে বকশীশ] [ * ধরপাকড়ে বাণিজ্যে খুবই পাকা খেলোয়াড়]
[ * মানবিক কাজে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি ] [ নিয়মিত কোরআন তেলওয়াত ও নামাজ পড়তে ভূলতেন না ]
মোঃ শাহজাহান ফকির স্টাফ রিপোর্টার
ময়মনসিংহের নান্দাইল মডেল থানা থেকে সদ্য বদলী হওয়ায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফরিদ আহমেদ মাত্র ১৬৯ দিনের কর্মদিবসে বেশ আলোচনা ও সমালোচনার পাত্র হয়েছেন। তবে এরই মধ্যে তিনবার জেলার শ্রেষ্ঠত্ব পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছেন। জানাগেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সনে ওসি ফরিদ আহমেদ নান্দাইলে যোগদান করেন। যোগদানের ৫ দিন পর ১লা অক্টোবর নান্দাইলে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। উক্ত মতবিনিময় সভায় জুয়া ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স ঘোষণা দিয়ে একের পর এক জুয়াড়ী ও মাদককারবারীকে ধরে জেল হাজতে প্রেরন করে অতি শীঘ্রই নান্দাইলবাসীর নিকট প্রশংসার পাত্র হয়ে উঠেন। পাশাপাশি মসজিদে বসে নিয়মিত কোরআন তেলওয়াত, জিকির ও নামাজ পড়তে ভূলতেন না বলে অনেকের নিকট তিনি ছিলেন ধার্মিক ওসি। তবে ওই সুযোগকে কাজিয়ে লাগিয়ে কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু করেন ফিফটি ফোর (৫৪) নামে নতুন খেলা। জুয়া ও মাদককারবারীদের ধরে ৫৩/৫৪ ধারায় চালান করে নিতেন মোটা অংকের বকশীশ। এতে করে পরদিনই ওই সমস্ত আসামী ছাড়া পেয়ে যেতো। তেমনি ফ্যাসিস্ট সরকারের দূর্নীতিবাজ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিরোধী নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করলেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে অনেক। এছাড়া ফ্যাসিস্টদেরকে ধরে এনে বিভিন্ন মামলায় হয়রানির ভয় দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে কৌশলে টাকা আদায় করতেন। এভাবে চলছে তাঁর দায়িত্ব পালন। এরই মধ্যে ২৪শে নভেম্বর ২০২৪ সনে ওসি ফরিদ আহমেদ মাদক উদ্বারে জেলার শ্রেষ্ঠত্ব প্রথম পুরস্কার গ্রহন করেন। পরবর্তীতে ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহ অন্যান্য বিষয়ে জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে তিনি নির্বাচিত হয়ে পুরষ্কার লাভ করেন। এর ১১দিন পরেই ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইং চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার ও মামলার রহস্য উদঘাটন এর জন্য তিনি আবারো জেলার শ্রেষ্ঠত্ব পুরস্কার অর্জন করেছেন। ওসি ফরিদ আহমেদের পরপর তিন পুরস্কার লাভে তিনি নিজেকে গর্বিতবোধ করে অনিয়মের রাজত্বের আরও একাধাপ ভিতরে এগিয়ে যান। ফলে বিভিন্ন মামলা নথিভূক্ত বা কাউন্টার মামলাও নথিভূক্ত করতে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওসি ফরিদ আহেমদ ধরপাকড় বাণিজ্যে যেমন পাকা খেলোয়াড় ছিলেন তেমনি মানবিক ওসি হিবাবে প্রশংসা খুড়িয়েছেন মানবিক কাজে সহায়তা সহ সাধারন নিম্ন আয়ের মানুষের বিচারপ্রার্থীর বেলায়। শুধু তাই নয় রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষকেও নিজ অর্থে চিকিৎসা দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অন্যদিকে দেশে কোন নির্বাচিত সরকার না থাকার সুযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের পড়োয়া না করে গড়ে তুলেছেন চাঁদাবাজির রাজত্ব। সরকারের বিভিন্ন হাটবাজার খাস জায়গায় গড়ে উঠা বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে বা বাজার সংলগ্ন সড়ক ও জনপথের জায়গায় অস্থায়ী ব্যবসায়ীদেরকে ধরে এনে জেল-হাজতে প্রেরন করতেন। আবার নিয়মিত সাপ্তাহিক ও মাসিক চাঁদা প্রাপ্ত হলে সরকারি জায়গায় বসার সুযোগ করে দিতেন তিনি, এযেন একদম পাকা খেলোয়াড়। তবে নান্দাইলের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হতে থাকে, বাড়তে থাকে চুরি ছিনতাই সহ নানা ধরনের অপকর্মের ঘটনা। অপহরণ মামলায় অপহৃতা উদ্বার তো দূরের কথা আসামিদের ধরার নামে সিডিআর এর কথা বলে মোটা অংকে টাকা নিতেন তিনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) অজ্ঞাত কারনে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে হঠাৎই তিনি ময়মনসিংহ পুলিশ অফিসে বদলী হন। ফলে শুক্রবার ভোররাতেই তিনি তড়িঘড়ি করে ময়মনসিংহ পুলিশ অফিসে যোগদান করেন। এদিকে ওসির বদলীর খবরে পেয়ে পাওনারদারগণ থানায় এসে ওসিকে খোজেঁ না পেয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এ নিয়ে পত্রিকা সংবাদ প্রকাশিত হলে শুক্রবার দিবাগত রাতে থানায় এসে পাওনাদারে টাকা পরিশোধ করে পুনরায় চলে যান ওসি ফরিদ আহমেদ। তবে নান্দাইল থেকে তরিঘড়ি করে বিদায় নেওয়ার সময় বিভিন্ন অভিযোগের ৫টি মামলা রেকর্ডভূক্ত করে মোটা অংকের টাকাও নিয়ে বিদায় নেন তিনি। নান্দাইল বাজার প্রাইম কালেকশনের মালিক মোফাজ্জল হোসেন খান রেণু বলেন, ওসি সাহেবের কাছে বিভিন্ন বিষয়ের সর্বমোট বকেয়া ১ লাখ ৪ হাজার ২৫০ টাকা শুক্রবার রাতেই তিনি (ওসি) তা পরিশোধ করেছেন। এ বিষয়ে ওসি ফরিদ আহমেদের ব্যক্তিগত সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো আমার নামে গুজব রটানো হচ্ছে। তবে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। এখানে ভূল বুঝাবুঝি হয়েছিল।
আপডেট সংবাদ পেতে আলোকিত সমাচার পড়ুন, সংবাদটি শেয়ার করে সাথে থাকুন
আরো সংবাদ পড়ুন
Leave a Reply