অনলাইন ডেস্ক
অন্য দিনগুলোতে মগবাজার থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত দেড়শ টাকা সিএনজি ভাড়ায় যাতায়াত করেন। তবে শুক্রবার (১২ জুলাই) টানা বৃষ্টির কারণে তাকে অতিরিক্ত ৫০ টাকা ভাড়া গুণতে হয়েছে।
সুজন বলছিলেন, আজ এমন অবস্থা যে দেড়শ টাকার ভাড়া সিএনজি চালকরা ৩৫০ টাকা চাচ্ছেন। শেষে ২০০ টাকায় আসতে পেরেছি, তাও প্রায় আধাঘণ্টা অপেক্ষার পর। কোনোভাবে সিএনজি পাওয়া যাচ্ছিল না।
শুক্রবার (১২ জুলাই) রাজধানীতে টানা বৃষ্টি পাতে ডুবে গেছে অন্তত ২৭টি এলাকার রাস্তাঘাট। অলি-গলি সবখানে পানি। তবে সেই পানি এখন নেমে যেতে শুরু করলেও নগরবাসীদের ভোগান্তি ছিল চরমে।
ধানমন্ডি থেকে বসুন্ধরা এলাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে সকালে রওনা হয়েছিলেন আসাদুল্লাহ। তিনি বলছিলেন, অন্য সময় আড়াইশ টাকায় যাতায়াত করতে পারতাম। কিন্তু আজ সেই ভাড়া সাড়ে তিনশ টাকা গুণতে হয়েছে।
অন্যদিকে, মগবাজার থেকে বারিধারা পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া গুণতে হয়েছে ২০০ টাকা, যা আগে ১৫০ টাকায় যাওয়া যেত বলছিলেন সেই এলাকার বাসিন্দা হারুন অর রশিদ।
শুধু আসাদুল্লাহ, হারুন অর রশিদ আর বরকত উল্লাহ সুজন নয় —এদিন সকাল থেকে জুমার নামাজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যেসব এলাকায় পানি জমে রাস্তাঘাট ডুবে গিয়েছিল ওইসব এলাকা থেকে যাতায়াত করতে সিএনজি এবং রিকশায় যেতে বাড়তি ভাড়া গুণতে হয়েছে।
বিশেষ করে ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, আরামবাগ, প্রগতি সরণি, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি রাপা প্লাজা, বংশাল, মিরপুর রোকেয়া সরণি, দয়াগঞ্জ মোড়, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, টয়েনবি সার্কেল রোড, ধানমন্ডি ২৭, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্য ভবন, কাওরান বাজার, বিজয় সরণি, ঢাকা গেট ভিআইপি রোড, মিরপুর মাজার রোডে ভোগান্তি ছিল চরমে।
বেশিরভাগ রাস্তায় গাড়ি ছিল না। ফলে শেষ ভরসা ছিল সিএনজি ও রিকশা। কিন্তু রিকশা পেতে অনেককেই ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেক এলাকায় আবার রিকশাও ছিল না। আবার দুই একটা পাওয়া গেলেও তারা যেতে চায় না গন্তব্যস্থলে।
রাজধানীর বিজয় সরণি মোড় থেকে কারওয়ানবাজার আসছিলেন শফিক শাহীন। ওই সময় তার সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল। তিনি জানালেন, অন্যদিন রিকশাভাড়া ৫০ টাকা। কিন্তু আজ রিকশায় চড়ে বসেছি, কত নেবে জানিনা। সেটা ৮০ থেকে ৯০ টাকার কম নয়।
তার সাথে কথা হচ্ছিল আর রিকশা চলছিল। তিনি ফোনে কথা বলছিলেন এই প্রতিবেদকের সাথে। এক পর্যায়ে ফার্মগেট গিয়ে রিকশাওয়ালা জানালেন, তিনি আর কারওয়ানবাজার পর্যন্ত যেতে পারবেন না। অগত্যাটা এই রিকশায় এইটুকু পথের জন্য ৫০ টাকা দিয়ে ভাড়া দিয়ে আরেকটি রিকশা খুঁজতে হলো তাকে। তিনি আরও বলছিলেন, আজ এমন অবস্থা রিকশাওয়ালারা জমিদার হয়ে গেছে। চাইলে তারা যাবেন, না চাইলে যাবেন না। আর ভাড়া তাদের মর্জি মতো দিতে হবে।
তবে আজ ঢাকার বাইরে থেকে নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা বেশ বিপাকে পড়েন। সকালে তাদের পরীক্ষা থাকায় অনেকে সময় নিয়ে বের হলেও রাস্তায় বের হয়ে পড়েন মহাবিপাকে। স্বল্প পথে রিকশাভাড়াও দ্বিগুণ গুণতে হয়েছে। তবে কোমর সমান পানি মাড়িয়ে এই শিক্ষার্থীরা অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিতে গেছেন।
সদরঘাট এলাকা থেকে সেগুনবাগিচা পর্যন্ত রিকশা নিয়ে আসতে শওকত আলীকে নামের এক যুবককে গুণতে হয়েছে ২০০ টাকা ভাড়া। কিন্তু সাধারণত ১০০ টাকায় এই পথ যাতায়াত করেন তিনি। তার মতো আজ ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যাতায়াত করতে গিয়ে বাড়তি ভাড়ার খড়গ ছিল সবার মাথায়।