জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সবকিছু যেন থমকে গিয়েছিল। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসেনি যানবাহন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কারফিউ চললেও পণ্যবাহী যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবুও কারফিউর অজুহাতে রাজধানী ঢাকায় দেশি ফলের দাম বাড়তির দিকে। শুধু তাই নয়, ক্রেতা সংকটে বিক্রি কমেছে। সেই দায়ও যেন চেপেছে ফল কিনতে আসা মানুষের ঘাড়ে! তাই আম থেকে শুরু করে সব ধরণের দেশি ফল কিছুটা বেশি টাকা দিয়েই কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর লক্ষ্মীবাজার, সেগুনবাগিচা, পল্টন এলাকায় দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বাড়তি দামের কারণে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে।
বিশেষ করে সব ধরণের আমের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। এজন্য অবশ্য বেশিরভাগ আম বাজারে আসার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার দোহাই দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
শুধু আমই নয়, লটকন, পেয়ারা, গাব, আমড়া, কলাসহ দেশীয় সব ফলেরই দাম গত কয়েকদিনের তুলনায় বেশি দেখা গেছে। অবশ্য জাতীয় ফল কাঁঠাল কিছুটা স্বস্তিতে মিলছে। ১০০ টাকায় মিলছে বড় আকারের কাঁঠাল।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের সামনে ভ্যানে আম বিক্রি করা শহিদুল ইসলাম শুক্রবার (২৬ জুলাই) সুরমা ফজলি ও মাঝারি আকারের আম্রপালি আম নিয়ে বসেছেন। সঙ্গে আছে ভালো মানের লটকনও।
দামের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুরমা ফজলি ১২০টার নীচে বিক্রি করা যাবে না। আম্রপালি ১৩০, শেষের দিকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হবে। আড়ত থেকে আগের মতো আম পাচ্ছি না। বিক্রিও কম।’
বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে আম বিক্রেতা আব্দুর রহীম জানান, আমের সরবরাহ কম। কয়দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গাড়ি চলেনি। এখন কারফিউ চলতেছে। আতঙ্কে অনেকে গাড়ি নিয়ে আসতেছেন না। আসলেও গাড়ি ভাড়া বেশি। যে কারণে শুরুর দিকে আমসহ অন্য পণ্য বিক্রিতে যে লাভ করতে পারতেন তা এখন করা যাচ্ছে না।
ঢাকা মেইলকে এই বিক্রেতা বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ হওয়ার আগে বাড়ি গেছিলাম। গাড়ি চলছে শোনার পর আসলাম। কিন্তু দিনের খোরাকিও উঠতেছে না। বিক্রি একদম কম। লোকজন তো রাস্তায় এখনো পুরোদমে নামেনি।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সুরমা ফজলি আকার ও মানভেদে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে। দিনের শুরুর দিকে ১২০টাকা কেজি বিক্রি হলেও শেষের দিকে অবশ্য ৮০ থেকে ৯০টাকা কেজিতেও কেনা যাচ্ছে। ভালো মানের আম্রপালি আম ১৪০টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বারি ফোর মানের আম এক সপ্তাহ আগেও ৮০ টাকা সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে। এখন এ আম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার উপরে।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের পাশের রাস্তায় একজন ফল বিক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ভাই ভালো জিনিসের ভালো দাম। সাইজে বড়, ভালো পাকা আম বেশি দাম দিয়ে কিনতে লোকজন চিন্তা করে না।’
অবশ্য পাশে দাঁড়ানো একজন ক্রেতা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘দুনিয়ার সব বাজারে যে দাম থাকবে সেগুনবাগিচায় কেজি প্রতি কম হলেও ২০টাকা বেশি দিয়ে জিনিস কিনতে হয়। এটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লটকনের কেজি ১৪০ থেকে ১৫০টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। পলিথিনে মোড়ানো পেয়ারা ৬০ থেকে ৮০টাকা কেজি। কোথাও আবার ১০০টাকাও চাওয়া হচ্ছে পেয়ারা। কিছুদিন আগে ড্রাগন ফল কিছুটা নাগালের মধ্যে থাকলেও এখন কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আকারভেদে প্রতি জোড়া আনারস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। প্রতি কেজি আমড়া বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। আর প্রতি পিস জামবুরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।
বাজার ঘুরে সবরি, চাপা ও সাগর কলার দামও বেশ চড়া লক্ষ্য করা গেছে। মোটামুটি মানের এক হালি সবরি কলা কিনতে ৪০ থেকে ৪৫টাকা গুনতে হবে। আকার বড় হলে ৬০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হতে পারে। চাহিদা থাকায় ছোট আকারের চাপা কলাও হালি ২০টাকা করে কিনতে হচ্ছে। আর সাগর কলা খেতে চাইলে ডজনপ্রতি গুনতে হবে ১২০ থেকে ১৪০টাকা।
এদিকে, বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধির জন্য নানা অজুহাত দিলেও ক্রেতারা সবকিছুতেই সিন্ডিকেটের হাত দেখছেন। তারা বলছেন, কারফিউকে পুঁজি করে সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় দাম বাড়াচ্ছেন।
রিপন মিয়া নামের একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সব ধরণের জিনিসের দাম তুলনামূলক কম ছিল। তখন তো গাড়ি ঢুকতেই পারেনি। আর এখন কারফিউ থাকলেও গাড়ি চলাচলে তো সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে কেন দাম বাড়বে? এখানেও সিন্ডিকেট কাজ করছে