কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে সহিংসতায় ভাঙচুর করা হয়েছে রেলের ইঞ্জিন ও কোচ। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ট্রেনের বগি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেলপথ। সব মিলিয়ে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ক্ষতির পরিমাণ ২১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ের এক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রেল সূত্র বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় চারটি ট্রেনের ৪০টি বগি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রেল চলাচল না করায় চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন।
জানা যায়, ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দেয়। তাছাড়া জনগণের নিরাপত্তায় সরকার কারফিউ জারি করে। ফলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গত ১৮ জুলাই থেকে সব ধরনের রেল চলাচল বন্ধ রাখে। কার্যত এর পর থেকে আর কোনো রেল চলাচল করেনি।
তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে শুক্রবার চারটি তেলবাহী ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ভোর সাড়ে ৫টায় ২৪টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন ঢাকা, সাড়ে ৬টায় ১৬টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন সিলেট, সকাল সাড়ে ১০টায় ১২টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন দোহাজারী এবং ১১টায় ১২টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন হাটহাজারী স্টেশনের উদ্দেশে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন ছেড়ে যায়। প্রতিটি ট্রেনে বিজিবি চট্টগ্রাম থেকে এক প্লাটুন করে সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
এসব তাণ্ডবের পর রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের দপ্তরপ্রধানদের নিয়ে গঠিত কমিটি প্রতিবেদনে বলেছে, দুষ্কৃতকারীরা রেলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী সুশীল কুমার হালদার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাণিজ্যিক বিভাগের, এরপর যান্ত্রিক বিভাগের।
কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চারটি ট্রেনের ৪০টি কোচ ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের সাতটি, চট্টলা এক্সপ্রেসের ১৩টি, জামালপুর এক্সপ্রেসের ছয়টি, পারাবত এক্সপ্রেসের আটটি ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের দুটি বগি ভাঙচুর করা হয়। কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের চারটি বগি পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া চট্টলা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ও কর্ণফুলী কমিউটারের ইঞ্জিন ভাঙচুর করা হয়।
রেলওয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায়। ১৮ থেকে ২৩ জুলাই বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন চলাচল না করায় যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দিতে হবে। এর পরিমাণ ১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলের আওতায় ঢাকা বিভাগের যাত্রীদের ফেরত দিতে হবে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের যাত্রীদের ফেরত দিতে হবে ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ইন্টারনেট পুরোপুরি সচল না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীদের কাছে বিক্রি করা টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেনে। বৈঠকে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।