গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলশীঘাট শামছুল হক ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে পিয়ন পদে চাকরি দেয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি পিয়ন নিয়োগের জন্য উৎকোচের প্রমাণ হিসেবে পিয়ন আজিজুর রহমানের মাধ্যমে ৫ বছর আগে বাতিল হওয়া একাউন্টের চেক লিখে দিয়ে প্রতারণা করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলশীঘাট শামছুল হক ডিগ্রি কলেজে অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন শুন্য পদে লোক নিয়োগের জন্য সম্প্রতি সার্কুলার দেয়া হয়। সার্কুলার অনুসারে উক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদের চন্দ্র প্রামাণিক কর্তৃক কলেজে কর্মরত অফিস সহকারী (পিয়ন) ও একই উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আলহাজ্ব ফজল উদ্দিনের পুত্র আজিজুর রহমানের মাধ্যমে বল্লমঝাড় গ্রামের আমিনুল ইসলাম মিন্টুর পুত্র নাজমুল ইসলামকে উক্ত পদে নিয়োগ নিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন।
আমিনুল ইসলাম মিন্টু জানান, আমি উক্ত কলেজের পিয়ন আজিজুর রহমানের প্রস্তাবে রাজি হয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদেব চন্দ্র প্রামাণিকের সাথে সামনাসামনি কথা বলতে চাই। ফলে পিয়ন আজিজুর রহমান আমাকে সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মহোদয়ের অফিস কক্ষে নিয়ে গিয়ে সামনা সামনি সাক্ষাত করান। এ সময় পিয়ন পদে চাকুরীর আলোচনা কালে উক্ত পদের বিপরীতে তারা আমার কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবী করেন। আমি এই ১০ লক্ষ টাকা দুই দফায় প্রদানের জন্য রাজী হয়ে জমি বিক্রিসহ বিভিন্ন ভাবে টাকা জোগার করার জন্য এক মাসের সময় চেয়ে নেই।
আমিনুল ইসলাম মিন্টু আরো জানান, যেহেতু আজকাল মানুষ বিভিন্ন প্রলোভনে পরে প্রতারণার শিকার হচ্ছে, তাই আমি টাকা প্রদানের প্রমাণপত্র দাবি করলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদেব চন্দ্র প্রামাণিকের সম্মতিতে আজিজুর রহমান আমাকে প্রমাণপত্র দিতে রাজি হয়। ফলে আমি টাকা জোগার করে ১৪মে'২০২৩ ইং তারিখে আজিজুর রহমানকে আমার বাড়িতে ডেকে এনে প্রতিবেশী নুরুন্নবী, আজাদুল, নুরুল ইসলামের উপস্থিতিতে একযোগে প্রথম দফায় ৫ লক্ষ প্রদান করি। আজিজুর রহমান আমাকে লিখিত ৩'শ টাকার স্ট্যাম্পে সহি বা স্বাক্ষর করেন। এ সময় এক মাসের মধ্যে আমার ছেলের চাকুরীতে যোগদান করার পর আমার কাছে রক্ষিত এই স্ট্যাম্পটি ফেরত নিবেন।
এদিকে, পুনরায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমিনুল ইসলাম মিন্টুর কাছ থেকে আজিজুর রহমান দ্বিতীয় দফায় আরো ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রমাণপত্র হিসেবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, তুলশীঘাট শাখায় লেনদেনে ব্যবহৃত একাউন্টের একটি চেকে লিখে দেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উক্ত চেকটির একাউন্টের শিরোনাম তুলশিঘাট শামসুল হক ডিগ্রি কলেজ এবং একাউন্ট হোল্ডার উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ। অথচ- এই চেকে সাক্ষর করেন পিয়ন আজিজুর রহমান। তবে দীর্ঘদিনেও পিয়ন পদে নাজমুলের চাকরি না হওয়ায় আমিনুল ইসলাম মিন্টু আজিজুর রহমানকে টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিলে দেই দিচ্ছে করে তাল বাহানা করতে থাকেন। অবশেষে উক্ত চেকে দিয়ে টাকা তুলতে গেলে একাউন্ট শূন্য বলে জানা যায়।
এছাড়াও আমিনুল ইসলাম মিন্টু আরো জানান, স্ট্যাম্পে প্রতারণার আরেক অভিনব পদ্ধতি হিসেবে আজিজুর রহমান আমাকে লিখে দেয়া স্ট্যাম্পে ইচ্ছাকৃত ভাবে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদেব চন্দ্র প্রামাণিকের স্থলে সাবেক অধ্যক্ষ একরামুল হক খান দেখিয়েছেন। যেটা আমি চেকে যাচাই করতে গিয়ে স্ট্যাম্পে অধ্যক্ষের নাম পরিবর্তন করে দেয়ার বিষয়টিও বুঝতে পেরেছি।
এ ব্যাপারে গত রবিবার বিকাল পৌনে তিনটার দিকে মোবাইলে আজিজুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিষয়টি পত্রিকায় প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদেব চন্দ্র প্রামাণিকের সাথে তার মতামত জানতে গতকাল কলেজে গেলে তিনি অফিসিয়াল কাজে গাইবান্ধা শহরে যাওয়ায় তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।