আবহমান বাংলার রূপ বড়ই বৈচিত্র্যময়। এই ছয় ঋতুর বাংলাদেশে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ দুই মাস হেমন্তকাল। হেমন্ত মানেই শীতের পূর্বাভাস। রাত শেষে ঠাণ্ডা শীত শীত হিমেল বাতাস, আর ভোরে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু। এই শিশিরবিন্দুই বলে দেয় শীত আসছে।দেশের হাওড় জনপদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শীতের আগমনীবার্তা আসার সঙ্গে সঙ্গে ধুনারীদের তুলা ছাঁটাই ও লেপ তোষক তৈরির কাজে কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে।
সপ্তাহ খানেক সময় ধরে এ উপজেলায় ভোরের দিকে হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ভোরবেলায় হালকা কুয়াশায় ঢেকে যায় সবুজ মাঠ। সামনে পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। তাই পদ্মা পাড়ের মানুষ আগে ভাগেই লেপ, তোষক বানাতে শুরু করেছে।
এছাড়াও মেয়ে-জামাই এর বাড়িতে বালিশ, লেপ, তোষক দেওয়াটাও একটি ঐতিহ্য রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের। তাই লেপ, তোষক কারিগরদের এখন দম ফেলার সময় নেই বলা চলে। বিরামহীনভাবে কাজ করছেন তারা। কেউ কেউ পুরনো লেপ ভেঙে নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ নতুন তুলা দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছে লেপ, তোষক ও বালিশ।
কটিয়াদী পৌর বাজারের লেপ তোষকের কারিগর মোঃ দ্বীন ইসলাম জানান, তারা বছরে প্রায় ৬ মাস অন্য কাজ করেন।কটিয়াদী পৌর বাজারে লেপ তোষকের কারিগর মোঃ নজরুল ইসলাম জানান শীত মৌসুম আসলে প্রায় ৫মাস লেপ তোষকের কাজ এবং বিক্রি করি।
শীত আসছে এমনটি টের পাওয়ার সাথে সাথে তাদের কদর বেড়ে যায়। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন লেপ-তোষকের দোকানে গিয়ে তারা প্রতি দিন ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকায়, আবার কেউ কেউ লেপপ্রতি ২শ’ থেকে ৩০০ টাকা হিসেবে লেপ, তোষক তৈরির কাজ করছেন।
কটিয়াদী পৌর শহরের মানিকখালী রোডে বুলবুল নামে ব্যবসায়ী জানান আমরা নুন্যতম তোষক প্রতিটি ২হাজার,লেপ প্রতিটি ১হাজার ৫শত,বালিশ ৮শত টাকায় বিকি করি।
কটিয়াদী নদীর বাধঁ লেপ-তোষক দোকানের মালিক বিল্লাল হোসেন মোঃ মনির হোসেন জানান, শীত এখনো জেঁকে না বসলেও অনেকে আগেভাগেই লেপ ও তোষক বানাতে আসছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতার সংখ্যা অনেকটাই বেশি। সারা বছরের চেয়ে শীতের এ তিন মাস বেচাকেনা একটু বেশিই হয়। তাই ক্রেতাদের কথা ভেবে কাজের গুণগতমান বজায় রেখে অর্ডারি কাজের পাশাপাশি রেডিমেড জিনিসও তৈরি করে বিক্রি করছেন এই লেপ-তোষকের দোকান মালিক।
উপজেলার আচমিতা থেকে লেপ তৈরি করতে আসা শফিকুর রহমান জানান, এখনো শীতের দেখা না মিললেও আগে ভাগেই শীতের জন্য একটি লেপ বানিয়ে নিচ্ছি।জালালপুরের সালমা বেগম নামের এক গৃহীনি জানান, কিছুদিন আগে তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাই মেয়ের জন্য লেপ, তোষক বানাতে এসেছেন তিনি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এবার লেপ-তোষক তৈরির মূল উপাদান কার্পাস তুলা ১৩০-১৫০ টাকা, বোমা তুলা ১১২-১৪০ টাকা, চাদর তুলা ৯০-১০০ টাকা এবং গার্মেন্টস তুলা ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে পৌর শহর ও গ্রাম গঞ্জে লেপ-তোষকের ফেরিওয়ালার সংখ্যা বেড়েছে অনেক। এ ডাক মৌসুমী ফেরিওয়ালাদের, যারা শীত এলে রিকশা-ভ্যানে, মাথায় করে লেপ-তোষক বিক্রিতে নেমে পড়েন।
পৌর শহরের বাজারের এলাকায় লেপ বিক্রয় করতে আসা ফেরিওয়ালা করম আলী বলেন, ‘কাপড়, নরমাল তুলা, মজুরি মিলে হাজার থেকে ১হাজার ৩শত টাকা খরচ পড়ছে, আমরা এটা বিক্রয় করি ১হাজার ৫শত থেকে ১ হাজার ৭শত টাকায়’।আকাশ মেঘলা থাকায় শীতের প্রকাশ কিছুটা কম, মেঘ কেটে গেলে শীতের আগমন বেশি।