কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচর শিবনাথ স্কুলের ছাত্র নিবাসে অবস্থিত পাকিস্থানী সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসরদের ক্যাম্পে ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে আক্রমণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। হামলায় অনেক পাক সেনা ও দোসররা তখন মারা গেলেও রাতের আধারে অনেকেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু তখন একজন পাক সেনা পারেনি পালাতে। তাকে জীবিতাবস্থায় আটক করে এ অঞ্চলের মুক্তিকামী বাঙালী জনতা। সেই পাক সেনাকে ধরে এনে সরারচর গোহাটার বটগাছে ঝুলিয়ে প্রচন্ড পরিমাণে মারধর করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে উত্তেজিত জনতা।
আর এই পাক সেনার মৃত্যুর মাধ্যমেই বিজয়ের দেড়মাস আগেই সরারচরের মাটি পাক হানাদার মুক্ত হয়।সরারচর যেদিন হানাদার মুক্ত হয়েছিল ঠিক তার একদিন আগে অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর বাজিতপুর পৌরসদরের বাঁশমহল এলাকায়ও শত শত পাক হানাদারবাহিনীর এদেশীয় সহায়তাকারীদের ধরে এনে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে মুক্তিযোদ্ধারা। এ তথ্যগুলো পাওয়া যায় স্মৃতিস্তম্ভবের দেয়ালে খোদাই করা লিখিত একটি শিলালিপি থেকে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উপজেলার বাঁশমহল এলাকার মতোই সরারচরের গোহাটা এলাকাটিও সমান গুরুত্ব বহন করে।মুক্তিযোদ্ধের এই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য বেশ কয়েকবছর আগে সরারচরের গোহাটায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। চারদিকে সীমানা প্রাচীর, দুটো ওয়াশরুম, বাচ্চাদের খেলাধূলা করার জন্য সরঞ্জামসহ নানা সাজে সাজানো হয় স্মৃতিস্তম্ভটিকে। গতবছরেও দৃষ্টি নন্দন ছিলো এ স্মৃতিস্তম্ভটির।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিসতম্ভটির দু'পাশের দুটি ওয়াশরুমের দরজা, কমোড, বেসিন, গ্লাসসহ পাইপ ভাঙচুর অবস্থায় রয়েছে।
ময়লা আবর্জনায় নোংরা স্যাতসেঁতে হয়ে আছে মেঝে। ভিতরে ও চারপাশের আধুনিক বৈদ্যুতিক বাল্বগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরিষ্কার করার অভাবে বড় বড় জঙ্গলী গাছ গাছড়া জন্মেছে। ভিতেরই নিয়মিত রাখা হচ্ছে টমটম ও ভ্যানগাড়ী। দেখে মনে হয় স্মৃতিস্তম্ভ নয় যেনো একটি গ্যারেজ। একপাশ লেপ তোশক তৈরি করার কারিগরদের দখলে। রাস্তার দিকে সামনের এলাকাটি খড় ব্যবসায়ীদের দখলে।
সরকারি অর্থায়নে নির্মিত এই স্মৃতিস্তম্ভটি দেখভাল ও তত্ত্বাবধায়নের অভাবে আস্তে আস্তে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহনকারী স্তম্ভটির নেই প্রশাসনিক তদারকি। বিজয়ের মাসেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও ভাঙন অংশগুলো সংস্কার না করায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ। এভাবেই সরকারি অর্থ ব্যয়ের নতুন নতুন খাতা খুলছে, কিন্তু তার সুফল পাচ্ছে না জনগণ।
বিজয়ের মাসে এটির তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করে সাধারণ মানুষের জন্য টয়লেটগুলো সংস্কার করে উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করে সাধারণ মানুষজন।