কিশোরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগপন্থী এক মুক্তিযোদ্ধার ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়ার ঘটনা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে শহরজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় অংশ নেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এ বি ছিদ্দিক, ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী, সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলামসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। তার এই স্লোগানের সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসকসহ অন্য কর্মকর্তারা। তবে স্লোগান দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখা গেলেও, ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
একাংশের অভিযোগ, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগেও জেলা প্রশাসককে সতর্ক করেছি, কিন্তু তিনি আমাদের কথা শোনেননি। প্রশাসনের এই ব্যর্থতা মেনে নেওয়া যায় না।’
অন্যদিকে, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য আবু হানিফ বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে প্রতারণা। প্রশাসনে দলীয়করণ এখন স্পষ্ট।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘এটি নিছক বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলে ফেলেছি। ২০২৪ সাল আর ১৯৭১ এক নয়। আমরা তখন প্রাণ দিয়ে যুদ্ধ করেছি।’
স্লোগান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, ‘আমি স্লোগান শুনিনি। আমার কাছে এ বিষয়টি জানা নেই।’
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মতো স্পর্শকাতর আয়োজনে রাজনৈতিক স্লোগান কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই বিতর্ক আরও দীর্ঘায়িত হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে ঘটনাটি প্রমাণ করে, রাজনৈতিক বিভাজন এখনও মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যকে প্রভাবিত করছে।