মোঃ মিজানুর রহমান,
এক সময় ভোজ্য তেলরূপে সরিষার তেলের ব্যবহার ছিল ঘরে ঘরে। ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগ, শীত প্রতিরোধে শরীরে মালিশ এবং সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরিষার তেলের ব্যবহার ছিল অনিবার্য। তাছাড়া সরষের খৈল গবাদি পশুর প্রিয় খাদ্য এবং সার হয়। সরষে গাছ জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয়। সরিষার তেলের এত বহুমুখী ব্যবহার সত্ত্বেও কালক্রমে এর চাহিদা হ্রাস পেতে থাকে এবং চাষাবাদের জমিও কমতে শুরু করে। ভোজ্য তেলরূপে আমদানি নির্ভর সয়াবিন ও পাম্প তেলের ব্যাপক বিস্তৃতি লাভের পর সরর্ষের জনপ্রিয়তার ভাটা পড়ে। কিন্তু হালফিল বছরে আমদানিকৃত তেলের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক ফের সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ে। বাড়তে থাকে সরিষার আবাদের জমির পরিমাণও। পাল্টে যেতে থাকে শীত মৌসুমে দিগন্ত জোড়া মাঠের চিত্র-প্রকৃতি যেন হলদে শাড়িপরা তরুণীর সাজে সজ্জিত হয়। অবারিত সুবিস্তৃত মাঠ।
জেলার গ্রামেগঞ্জের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরষে ফুলের সমারোহ। ক্ষেতের পর ক্ষেতজুড়ে সরষে ফুলের হলদে আভা রাঙিয়ে দিয়েছে দিগন্ত। ওপরে নীল আকাশ এবং জমিনে হরিদ্রাভ বর্ণের সরষে ফুল-দুয়ে মিলে প্রকৃতিকে মোহনীয় রূপে সাজিয়ে তুলেছে। ক্ষেত থেকে ভেসে আসা হলুদ বরণ সরিষা ফুলের কাঁচা মিষ্টি গন্ধে চারদিক এখন মাতোয়ারা। মৌমাছিরা সে ঘ্রাণে আকৃষ্ট হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে ক্ষেতে। গুঞ্জরণে মেতে ওঠে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে ফিরে যাচ্ছে। বিচিত্র বর্ণের সব প্রজাপতির সরষে ফুলের ওপর উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য প্রকৃতিকে আরো অপরূপা করে তুলেছে।
সাধারণত নিচু জমিতেই সরর্ষের আবাদ হয়ে থাকে। কার্তিক মাসে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমির আগাছা পরিষ্কার করে ফেলে হালচাষ ছাড়াই নরম জমিতে সরষে বপন করা হয়। শীত কুয়াশায় সরষের ফলন ভালো হয়। রোপণের মাত্র ৮০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে পাকা সরিষা ঘরে তোলা হয়। চলতি রবি মৌসুমে কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ উপজেলাতেই সরষের আবাদ হয়েছে। জেলায় মোট আবাদকৃত জমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ আবাদ করা হয়েছে। আবহওয়া অনুকুলে থাকলে এ বছর ২০ হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন সরিষার উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষকরা জানান, সরষে কাটা ও মাড়াই শুরু হতে আরো কদিন বাকি। স্থানীয় তেলকলের মালিকরাই সরষের প্রধান ক্রেতা। মধ্যস্বত্তভোগী ফড়িয়াদের খপ্পরে পড়ে কৃষকরা বেশিরভাগ সময় ফসলের ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। বাজারে সর্ষের চাহিদা এবং মূল্য বৃদ্ধির ফলে চাষীরা সর্ষে চাষের দিকে অধিক ঝুঁকে পড়েছে।