স্টাফ রিপোর্টারঃ
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার জাতীয় মহিলা সংস্থার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র রায় কর্তৃক প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ ভাতার ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন কর্মকর্তা মোছাঃ স্বপ্না আক্তারের ঘুষ দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হওয়ায় অফিসের কর্মচারীদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয় ভুক্তভোগীদের পক্ষে ডিমলা থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রকার প্রতিকার না পাওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারী জেলার ডিমলায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থার আওতায় তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ডিমলা শাখায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৫ টি ট্রেডে ৮ শত জন নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তৎকালীন প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ ভাতার ৬৮ লাখ টাকা কৌশলে উত্তোলন করে পালিয়ে যায়।
এরপরে আওয়ামীলীগ সরকারের নীলফামারী -১ (ডোমার ডিমলা) আসনের সাংসদ আফতাব উদ্দিন সরকারের হস্তক্ষেপে মোছাঃ স্বপ্না আক্তার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান । দায়িত্ব নেয়ার পর ওই কর্মকর্তা প্রশিক্ষণার্থী সংগ্রহে চলতি অর্থবছরে দরখাস্ত আহবান করেন । জাতীয় মহিলা সংস্থার ডিমলা শাখা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছাঃ স্বপ্না আক্তার আবেদন কারীদের প্রশিক্ষণার্থী নিয়োগের জন্য তাদের প্রতিজনের নিকট থেকে উৎকোচ বাবদ ৩/৪ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করেন। ঘুষের বিনিময়ে প্রশিক্ষণার্থী নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়লে গোটা উপজেলা জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে ।
বিষয়টি নিয়ে আবেদনকারীরা আন্দোলনে নামেন। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাসেল মিয়া ঘুষ দুর্নীতির বিষয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামানকে অবগত করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাসেল মিয়া লটারির মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের চুড়ান্ত তালিকার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। লটারি মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় প্রশিক্ষণের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় ঘুষ প্রদানকারী অধিকাংশ মহিলার নাম। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপে প্রশিক্ষানার্থীদের নামের তালিকা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হলেও আবেদনকারীদের প্রদেয় টাকা ফেরত বা টাকা ফেরত প্রদানের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
২৫০ জন প্রশিক্ষণার্থীর বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে প্রায় ৫২৭ জন । অভিযোগ রয়েছে, মোছাঃ স্বপ্না আক্তার প্রায় ১০ লক্ষ টাকার অধিক নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। উপজেলা শাখায় কর্মরত আছেন ৭ জন। এর মধ্যে ৩ জন নারী ও ২ জন পুরুষ প্রশিক্ষক এবং ১ জন অফিস সহকারী ও স্বপ্না আক্তার নামের স্থানীয় একজন প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা রয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশিক্ষক বেলাল হোসেন জানান, প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সপ্না আক্তার স্যারের বিরুদ্ধে জেলা কর্মকর্তাকে কোন তথ্য জানাইনি। ইউএনও স্যারের মাধ্যমে বিষয়টি জেলা কর্মকর্তা ও ডিসি স্যার জানেন। ইউএনও স্যার নিজেই লটারি করেছেন। আমাদেরকে অহেতুক সন্দেহ করে স্বপ্না আক্তার স্যার তার ভাই বজলার রহমানকে দিয়ে গভীর রাতে মোবাইল ফোনে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
হুকির বিষয়ে ইউএনও স্যারকে অবগত করি। তার অনুমতি নিয়ে ডিমলা থানার ওসি স্যারের কাছে অভিযোগ পত্র জমা দিলেও অদ্যবদি তিনি কোন আইনগত ব্যাবস্হা গ্রহন করেনি। আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ব্যাপারে জাতীয় মহিলা সংস্থা ডিমলা শাখার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছাঃ স্বপ্না আক্তার প্রশিক্ষাণার্থী আগ্রহীদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা গ্রহণ ও প্রশিক্ষকদের প্রাণ নাশের হুমকির বিষয় অস্বীকার করেন ।
ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফজলে এলাহী জানান, এ বিষয়ে আমাকে কোন অভিযোগ দিয়াছে কিনা আমার মনে পড়ছে না তার পরেও খুঁজে দেখব। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাসেল মিয়া বলেন, দুর্নীতির অভিযোগের কারণেই তো ডিসি স্যারের নির্দেশে লটারির মাধ্যমে প্রশিক্ষাণার্থী নির্বাচন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। নীলফামারী জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জাতীয় মহিলা সংস্থার ডিমলা উপজেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা স্বপ্না আক্তারের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের বিষয় আমি সহ প্রকল্পের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক মহোদয় জানেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইউএনও সাহেব অনিয়মের বিষয়টি দেখছেন।