মোঃ শাহজাহান ফকির,স্টাফ রিপোর্টার:
নান্দাইলে দীর্ঘদিনের জমি সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ফায়সালার জন্য ধার্য্যকৃত দিনতারিখ পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে সালিশের আহব্বায়কের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করেছে একটি পক্ষ। এতে ৬টি বসতঘর, ২টি পাকঘর, ৩টি গোয়ালঘর ও অন্যান্যঘর ভাংচুর করে আনুমানিক ৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন সহ ৮টি গরু এবং নগদ টাকা সহ প্রায় ১৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মালামাল লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (১লা এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে নান্দাইল উপজেলার ৮নং সিংরইল ইউনিয়নের মধ্যনগর গ্রামের মৃত হোসেন আলীর পুত্র ওই সালিশের আহ্বায়ক মো. আব্দুল জলিলের বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটেছে। উক্ত ঘটনার খবর পেয়ে নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরির্দশন করে তাৎক্ষনিক একটি গরু উদ্ধার করে ভোক্তভোগীকে দিয়ে আসেন। এ ঘটনায় মধ্যনগর গ্রামের চাঁন মিয়ার পুত্র বাচ্চু মিয়া, মৃত আমির হোসেনের পুত্র চাঁন মিয়া, মঙ্গল মিয়া, আ: গণি, আ: গণির পুত্র মোজাম্মেল হক, মৃত ছমির উদ্দিনের পুত্র বোরহান উদ্দিন ও কাঞ্চন মিয়া সহ ২১ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতে আব্দুল জলিল বাদী হয়ে নান্দাইল মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ ও সরজমিনে জানাগেছে, উল্লেখিত আসামী মৃত আমির হোসেনের পুত্র মঙ্গল মিয়ার পরিবারের সাথে একই গ্রামের শামছুল হকের পুত্র এমদাদুল হকের সাথে বাড়ির জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ হলেও এর কোন সুরাহা হয়নি। সর্বশেষ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও এমদাদুল হকের প্রতিবেশী আব্দুল জলিলকে সালিশের আহ্বায়ক করে ৫ই এপ্রিল/২৫ইং একটি সালিশ বসার কথা ছিল। কিন্তু ওই তারিখ পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ বাকবিতকন্ডা জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সালিশের আহ্বায়ক আব্দুল জলিল অপরপক্ষ মঙ্গল মিয়া ও বাচ্চু মিয়া গংদেরকে ৫ তারিখেই সালিশ বসার সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে বলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার সকালে উল্লেখিত আসামী বাচ্চু মিয়া ও মঙ্গল মিয়া গংরা সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনকে সাথে নিয়ে দেশী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আব্দুল জলিল ও আ: জলিলের ভাইদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। এতে আব্দুল জলিল সহ তাঁর ভাইয়েরা হামলাকালীদের বাধা দেওয়ায় তাদেরকে অস্ত্রের মুখে দৌড়াই নিয়ে গেলে প্রাণরক্ষার্থে তারা অন্যত্র আশ্রয় নেয়। এসময় হামলাকারীরা বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে ফাইজুল ইসলামের ৩টি গরু, লিটন মিয়ার ৪টি গরু ও খলিল মিয়ার ১টি গরু সহ তাদের প্রত্যেকের বসত ঘরে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন আব্দুল জলিল, ফাইজুল ইসলাম ও লিটন মিয়া গংরা। এ বিষয়ে আব্দুল জলিল বলেন, বাচ্চু মিয়া ও মঙ্গল মিয়া গংরা সালিশ দরবারে বসতে চায় না বলেই সালিশের দিনতারিখ পরির্বতনের অযুহাতে এহেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়েছে। ৮টি গরুর মধ্যে একটি গরু লুটের সাথে সাথেই জবাই করে তারা তা ফেসবুকে দিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। যাতে করে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস না পায়। এছাড়া দিনদুপুরে অহেতুক মানুষের বাড়ি-ঘরে যারা হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে, তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতার আনার জোর দাবী জানিয়েছেন আব্দুল জলিল সহ তাঁর পরিবারের লোকজন। সিংরইল ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, শালিস হলেও কাগজপত্রের কারণে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করা যায়নি। উভয় পক্ষের কাগজপত্র নিয়ে আগামী ৫ তারিখ বসার কথা ছিল। এর মধ্যেই মঙ্গলবার হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। এ বিষয়ে ওসি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন উক্ত হামলার ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং একটি গরু উদ্ধার করে দিয়ে আসি। তবে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অপরদিকে হামলায় অভিযুক্ত মোজাম্মেল হকের স্ত্রী সালমা আক্তার উক্ত হামলার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, একটু ভাংচুর হয়েছে সত্যি, তবে কোন লুটপাট করা হয়নি।