জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
সংস্কারের নামে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্ব করার সঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছে সিপিবি ও বাসদের নেতারা। তাদের মতে, এতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নেবে। সংস্কার ও নির্বাচনকে প্রতিপক্ষ ভাবার সুযোগ নেই। প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দ্রুত শেষ করে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর বা তার আগেই করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
রোববার (২০ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর বনানী হোটেল সারিনাতে বিএনপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তারা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম বলেন, ১৫ বছরের ক্ষোভ ৫ আগস্টে মানুষ প্রকাশ করেছে। সেখানে মানুষের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল ভোট দিতে পারে নাই। মানুষ চায় গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার। এখন যারা সংস্কারের নামে নির্বাচন দেরি করিয়ে গণপরিষদ নির্বাচন বা অন্য যেগুলো আনছে, তারা এন্টি ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স। হাসিনাও এন্টি ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, এরাও সেই জায়গাটাতে গিয়ে দেশটাকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। তা দেশের জন্য মঙ্গল হবে না।
সিপিবি'র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাজনীতিতে আমরা একটা নতুন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই। রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হওয়া, অনেকদিন ধরেই বন্ধ ছিল। সেটা ভেঙে ফেলা দরকার। একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক ধারায় কীভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেই কাজটি করা দরকার।
তিনি বলেন, আমরা জোটগতভাবে অনেক আগে থেকেই বলে এসেছি, বাংলাদেশে জরুরিভাবে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার। কারণ অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে, সংকট আরও ঘনীভূত হবে। আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি ডিসেম্বর কেন? ডিসেম্বরের অনেক আগেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য অবাধ নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, সেটা করে নির্বাচন করা সম্ভব। বিএনপি সাধারণভাবে বলেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। বরং আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের আগেই বাংলাদেশের নির্বাচন হওয়া সম্ভব। সেটা করার জন্য জরুরিভাবে আগানো দরকার। আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে যাওয়াটা দরকার বলে মনে করি।
কমিউনিস্ট পার্টি উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, যারা নির্বাচনের পরে সংস্কার করতে চায়, তারাই হচ্ছে আসল সংস্কারের পক্ষে। আর যারা নির্বাচন না করে সংস্কার করতে চায়, একটা অধ্যাদেশ জারি করার মাধ্যমে, সেটা বালুতে গাঁথুনির মতো। শক্ত ভিত্তির ওপর সংস্কার করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ লাগবে, জনগণের সম্মতি নিতে হবে। সেটা করতে হলে একটি নির্বাচন অপরিহার্য। তবে যেকোনো নির্বাচনের নামে প্রহসন আমরা গ্রহণ করবো না।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, আজ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, এবং বাংলাদেশ দলের সমাজতান্ত্রিক দলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের একটি অনানুষ্ঠানিক সভা হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তারা কীভাবে দেখছে, আমরা কীভাবে দেখছি সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে আমাদের দল বাসদ, সিপিবিসহ; সংস্কার আমরাও চাই। আমরা এই ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে চাই, আমরা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এখনকার যে নিয়ম আছে সেটা ভাঙতে চাই। কিন্তু সংস্কার এবং নির্বাচনকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নাই। উন্নয়ন আর গণতন্ত্র ফ্যাসিস্ট হাসিনা বানিয়েছিল। এখন সংস্কার এবং নির্বাচনকে একে অপরের প্রতিপক্ষ যেন না বানানো হয়। নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সংস্কারের কার্যক্রমগুলো কার্যকর করা হবে। অধ্যাদেশ জারি করেও যদি সংস্কার করা হয়, সেটা নির্বাচিত পার্লামেন্টে অনুমোদিত করতে হবে। তা না হলে সেটার কোনো কার্যকারিতা থাকবে না।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি লিয়াঁজো কমিটির নেতৃত্বে বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।