নিউজ ডেস্ক:
১০ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে বাল্য বিয়ে করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন ৪৫ বছর বয়সী এক শিক্ষক। নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০ম শ্রেণীতে বাণিজ্য শাখায় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে বাল্য বিয়ে করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার মালঞ্চা ইউনিয়নে। সরকার বাল্য বিয়ে মুক্ত ঘোষণা করার পরও একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাল্য বিয়ে করতে পারেন তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মালঞ্চা ইউনিয়নের কলেজপাড়া গ্রামের মো: তারিকুল ইসলাম তারিক এর ১০ম শ্রেণী পড়ুয়া কাহালু তাইরুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী মোছা: তৃষা আক্তারের উপর নজর পড়ে একই বিদ্যালয়ের গণিতের সহকারী শিক্ষক মো: আরিফুল ইসলাম আরিফ এর। এরপর ওই শিক্ষার্থীকে নানাভাবে ফুসলিয়ে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং মেয়েটির পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তার প্রলোভনও দেখাতে থাকেন। এরই এক পর্যায়ে গত শুক্রবার রাতে মেয়েটির পরিবারের লোকজন ঐ শিক্ষকের সাথে তৃষার বিয়ে দেন। শিক্ষকের বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে।
এদিকে, একজন শিক্ষক বাল্যবিয়ে করলেও বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির কেউ কোন আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ায় অবিভাবক মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।অবিভাবকদের একটাই প্রশ্ন, যে শিক্ষকের কাছে ছাত্র-ছাত্রীরা মানুষ্যত্ব অর্জন করবে সেই শিক্ষকই যদি এমন কাজ করে তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা তাদের কাছে শিখবেই বা কি? এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক অবিভাবকেরাই এসে নানান ভাবে শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করছেন। আমরা লজ্ঝায় মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে আসতে হচ্ছে। আবার অনেক মেয়ের অবিভাবকেরাও তাদের মেয়েদের প্রাইভেট পড়াতে ও বিধ্যালয়ে পাঠাতে রাজি হচ্ছেন না।
এই বিষয়ে শিক্ষক আরিফুল ইসলামের সাথে কলা কলতে চাইলে তিনি বলেন- আপনাদেরকে কি মেয়ের পরিবার অভিযোগ করেছে?যেখানে মেয়ের পরিবারের কোন অভিযোগ নেই সেখানে আপনাদের এখানে কাজ কি? আপনারা মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলেন।
এই বিষয়ে মেয়ের বাবা মো: তারিকের সাথে কথা বলতে চাইলে তারিক ও তারিকের পরিবারের কেউ কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।
এই বিষয়ে কাহালু তাইরুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: বেলাল উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ঘঠনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঐ শিক্ষক আমাদের বিদ্যালয়েরই এক শিক্ষার্থীকে বিয়ে করেছেন এই বিষয়টি সত্য। আমিও ২ দিন আগে শুনেছি। এখন ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পরীক্ষা চলছে, আমরা পরবর্তীতে মাসিক মিটিংয়ে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
এই বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: রুহুল আমিনকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি বলেন, আমিও বিষয়টি শুনেছি।আমি বিষয়টি তৎক্ষনাৎ ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন।এই এই বিষয়টি ইউএনও ম্যাডামকেও জানিয়েছি।তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত করে ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: মেরিনা আফরোজ বলেন, যেহেতু বাল্য বিবাহ হয়ে গেছে, সেখানে মোবাইলকোর্ট করার সুযোগ নেই। তবে যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক বিষয় সেহেতু আমরা তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।