মনসিংহের নান্দাইলে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা/ কাবিটা) ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচীর প্রকল্পের কাজ না করেই পুরো টাকা হরিলুট হয়েছে। নান্দাইল উপজেলার বেশ কয়েকটা ইউনিয়নের প্রকল্প ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়ায় স্থানীয়রা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সরজমিন জানাগেছে, মুশুল্লী ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাবিটা প্রকল্পের চপই এতিমখানা মাদ্রাসার পুকুরের পশ্চিশ পাশে গাইডওয়াল নির্মাণ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
কাবিখা প্রকল্পের একই মাদ্রাসার একই পুকুরের পূর্ব পাশের গাইডওয়াল নির্মাণে আরও ৮ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ হলেও কাজ হয়নি। দুটি প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম ও আব্দুল মোতালিব বলেন – এখানে কোন প্রকল্প বরাদ্দ হয়েছে কিনা এলাকাবাসীর জানা নেই। তবে চেয়ারম্যান (ইউপি) বলেছিল কিছু কাজ করে দিব। এদিকে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি.আর) প্রকল্পের মুশুল্লির পালাহার গ্রামের কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ হাইওয়ে রোড থেকে হাবিবুর রহমানের বাড়ি রাস্তা পূন:মেরামত প্রকল্পের ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একই রাস্তার লোকমান মিয়ার পুকুরের গাইড ওয়াল নির্মাণে ৩ লাখ বরাদ্দ থাকলেও কাজ হয়নি। এ প্রকল্প সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ও লোকমান বলেন- প্রকল্প বরাদ্দ থাকলেও কাজ হয়নি। এছাড়া গাংগাইল ইউনিয়নের পংকরহাটি গোলাপ মেম্বারের বাড়ি হতে ফারুকের বাড়ি পাড় হয়ে হালটের শেষ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে কাবিটা প্রকল্পে ৪ লাখ ৫০ টাকা বরাদ্দ এবং পংরকহাটি মধুর বাড়ি হইতে পংকরহাটি রঙ্গুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে সাধারণ টিআর প্রকল্পে ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দে কোন কাজ হয়নি। প্রকল্পের সভাপতি গোলাপ মেম্বার বলেন, পিআইও সাহেব এসেছেন।
টাকা উত্তোলন করেছি ঠিকই, বর্ষার শেষে মাটি কাটার কাজ শুরু হবে। রাজগাতী ইউনিয়নের আশরাফ চেয়ারম্যানের বাড়ি হতে মুকশেদ আলী চেয়ারম্যানে বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে কাবিটা প্রকল্পে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও আংশিক কাজ করেই পুরো টাকা উত্তোলন করেছেন অত্র ইউপি চেয়ারম্যান। বিলভাদেরা রহিম মেম্বারের বাড়ি হতে বড় বিল পর্যন্ত রাস্তা মেরামতে টিআর প্রকল্পে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দে আংশিক কাজ হয়েছে। উলুহাটি গ্রামে একই রাস্তা দুটি খন্দে আলাদা আলাদা প্রকল্প দেখিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দে আংশিক কাজ করেই পুরো টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অপরদিকে মুশুল্লি বারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের রাস্তা সংস্কার ৯ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ থাকলেও কাজ না করেই পুরো চাল তুলে নিয়ে গেছে মুশুল্লি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইফতিকার উদ্দিন ভূঁইয়া। বারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প রাস্তার সংস্কার প্রকল্পের সভাপতি সালেহা খাতুন বলেন- এই রাস্তায় কোন মাটি কাটা হয়নি। আমি প্রকল্পের সভাপতি কিনা তাও জানি না। নান্দাইল থেকে লোকজন এসে স্বাক্ষর চাইলে আমি সহ ৪-৫ জন স্বাক্ষর দিয়েছি। বারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে মুশুল্লি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইফতিকার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন- প্রকল্পটি আমার তালিকায় পিআইও দিয়েছে। তবে ঐ প্রকল্পের কাজ তিনি (পিআইও) করেছেন কিনা তাও আমি জানি না। এছাড়া বর্ষাকাল থাকায় কাজ করতে পারি নাই। প্রকল্পের টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন- টাকা উত্তোলন করেছি সত্য তবে কাজ করিয়ে নিব। ঐ প্রকল্প গুলোর কাজ না করে কিভাবে টাকা উত্তোলন করলো? গাংগাইল ইউপি চেয়ারম্যান এড. আসাদুজ্জামান নয়ন বলেন, বৃষ্টি থাকার কারণে কাজ করতে পারি নাই। শীঘ্র্রই কাজ করা হবে। রাজগাতী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেকার মোমতাজ খোকন, আমি তো কিছু কাজ করেছি, বর্ষা শেষ হলেও বাকী কাজ সম্পন্ন করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আহসান উল্লাহ্ বলেন- প্রকল্পের কাজ তো হওয়ার কথা। আশ্রয়ন প্রকল্পের রাস্তার কথা জানতে চাইলে তিনি আরোও বলেন- এখানে কিছু মাটি কাটা হয়েছে। এইসব প্রকল্পের সভাপতিদের নাম জানতে চাইলে পিআইও দিতে অস্বীকার করেন।
Leave a Reply