কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার দৃষ্টিনন্দন গাংগাটিয়া জমিদার বাড়ী বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।জমিদারদের তৈরি বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন রকমের ইতিহাস। অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন নিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় ভরপুর গাংগাটিয়ার এই জমিদার বাড়ি অন্যতম ।
কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার ৩ নং গোবিন্দপুর ইউনিয়নে গাংগাটিয়া জমিদার বাড়ি অবস্থিত। দৃষ্টিনন্দন গাংগাটিয়া জমিদার বাড়িটি ঘোড়া পত্তন হয় ব্রিটিশ শাসন আমলে শেষ দিকে।
এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ভোলানাথ চক্রবর্তী।অন্যান্য জমিদার বাড়ির মতো এটি ধ্বংসস্তপে পরিণত না হয়ে এখনো পুরোপুরি টিকে আছে।কিশোরগঞ্জে প্রাচীন নান্দনিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে এই জমিদার বাড়িটিও অন্যতম ।
জমিদার মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী চৌধুরীর বাড়ির সামনে সাগরদিঘী ও পানান বিলে আছে শো বিশাল মাছের খামার, এই খামার গুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ , এই মাছ এলাকার চাহিদা পূরন করে দেশে ও দেশের বাহিরে রপ্তানি করা হয়।
জমিদারিত্ব না থাকলেও শেষ জমিদারের ছেলে ৮৬ বছর বয়সি শ্রী মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী চৌধুরী (মানব বাবু ) এখনো বেঁচে আছেন। তিনি এই বয়সেও জমিদার বাড়ির ক্ষণশীল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
জমিদার বাড়ির সু বিশাল মূল ফটকে সু স্পষ্ট ভাবে শ্রীধর ভবন লেখা রয়েছে । প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনী এই জমিদার বাড়িটি আঠারো শতকে গ্রীক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত।জমিদার বাড়ির সামনে রয়েছে সাগর দিঘি পুকুর বাড়িটিতে রয়েছে নবহত কানা, কাচারি ঘর দরবার গৃহ ও মন্দির। দরবার গৃহে এখনো শত বছরের পুরাতন আসবাবপত্র রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পিতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের কে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, পড়ে মানব বাবু সেখানে একটি সমাধি স্তম্ভ তৈরি করে। বর্তমানে এই বাড়িটি জমিদার বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী চৌধুরী নাম অনুসারে পরিচিত।
অতি প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয় ১৮ শতকের প্রথম দিকে। ইতিহাস থেকে জানা যায় বাবু অতুলচন্দ্র চক্রবর্তী সূত্রে আঠার বাড়ির জমিদার জ্ঞানদা
সুন্দরী চৌধুরানীর কাছ থেকে দুই আনা অংশ গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ির জমিদারিত্ব অন্তর্ভুক্ত করেন
এই জমিদার বংশের আদি বাসস্থান ছিল ভারতের।প্রায় ৬০০ বছর আগে তারা সেখান থেকে গাঙ্গাটিয়া এসে বসতি স্থাপন করেন।তারপর দেশ বিভক্ত হওয়ার পর জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হয়ে জমিদারি ও শেষ হয়ে যায়।
জমিদার বাড়ি দেখতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী জানায়, জমিদার বাড়িটি অনেক পুরানো।মাঝে মধ্যে সময় কাটাতে এখানে কিছু সময়ের জন্য বেড়াতে আসি। মানব বাবুর বাড়িতে আসলে মনে হয় কোন রাজপ্রসাদে এসেছি। এছাড়াও বাবুর মাছের ফিসারি গুলো দৃষ্টিনন্দন, চোখে জুরানো সবুজ প্রকৃতি উপভোগের জন্য মানব বাবুর বাড়ি ছোট বড় সকলের কাছে প্রিয় জায়গা।
অনুভোতির কথা জানতে চাইলে মানব বাবু জানান আমার এখন বয়স হয়েছে, আমি আর ইন্ডিয়া ফিরে যাব না, আমি এখানে আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।
মানব বাবু আরো জানান বাড়িতে অনেক লোক ঘুরতে আসে কিন্তু তাদেরকে কোন বাধা প্রদান করা হয় না, তারা বাড়িতে এসে বিভিন্ন জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলে। তাই বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি । ইংল্যান্ড থেকে আনা টাইলস গুলোর অনেক ক্ষতি করেছে ভেঙে ফেলেছে তা আবারো পুনরায় মেরামত করা হয়েছে।
বিনোদনের জন্য প্রতিদিন রাত্রে আমার দরবার গৃহে গানের আসর বসে অবসর সময় আমি নিজেও গান করি, যতদিন বেচে থাকব সকলকে নিয়েই আনন্দের মুহূর্তে সময়টা কাটাতে চাই।
Leave a Reply