কিশোরগঞ্জে অবৈধভাবে চলছে ৩৭ ইটভাটা, নজর নেই প্রশাসনের
-
প্রকাশিত:
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
-
৫৮
বার শেয়ার করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের ফসলি জমিগুলো এখন ইটভাটায় ক্ষত। ভাটার ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। জেলায় বাড়ছে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীর সংখ্যা। ভাটার ইটের জন্য ফসলি জমি কেটে জেলা অধিকাংশ গ্রামগুলো পুকুরে পরিণত হচ্ছে। এতে ফসলি জমির আয়তন কমার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে জমির টপ সয়েল।
এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়সের শিশু-কিশোরদের দিয়ে করানো হচ্ছে ইট তৈরির কাজ। মানা হচ্ছে না শিশু শ্রম আইন। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্বেও এ জেলায় তা মানা হচ্ছে না। পরিবেশের এ বিপর্যয়ে পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইটভাটা বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করলেও কিশোরগঞ্জে সেরকম কোনো অভিযান চোখে পড়েনি।
অনুসন্ধান ও সরেজমিনে দেখা যায়, অবৈধ তালিকায় থাকা ইটভাটাগুলোর অধিকাংশ ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ। শুধু তা-ই নয় অনেক ভাটার চিমনির দৈর্ঘ্য কম থাকায় ধোঁয়া সরাসরি আশপাশের গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে ভাটার আশপাশের গ্রামগুলোতে বেড়েই চলছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা।
অবৈধ ইটভাটার আশপাশের লোকজন বলছে, ইটভাটার মালিকরা টাকাওয়ালা হওয়ায় তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইটভাটাগুলোতে ইট পুড়াচ্ছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয় ও ফসলি জমির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। যেসব ইটভাটার মালিক প্রশাসনকে টাকা বেশি দেয়, তারা অবৈধ থাকলেও অটোমেটিক বৈধ তালিকায় স্থান পায়। একটা ইটভাটাকে কেন্দ্র করে এসিল্যান্ড, পরিবেশ, পুলিশ, সাংবাদিক সবাই টাকা খায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কিশোরগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, অবৈধভাবে গড়ে উঠা ইটভাটাগুলো পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। যার ফলে মানুষ অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি। না হলে আমরা তীব্র আন্দোলনের ডাক দিব।
পরিবেশ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, জেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা ১১০টি। এরমধ্যে ৩৭টি ইটভাটা অবৈধ চলছে।
অবৈধ তালিকায় রয়েছে: মেসার্স রাকিব ব্রিকস, মেসার্স তাবিয়া ব্রিকস, মেসার্স আতা ব্রিকস, মেসার্স জোনাকি ব্রিকস, মেসার্স জনতা ব্রিকস, মেসার্স লাকী ব্রিকস ফিল্ড, এসএস ব্রিক ফিল্ড,কেবিসি ব্রিকস, মেসার্স হোসেনপুর ব্রিকস, মেসার্স ইটনা ব্রিকস, মেসার্স কেএসবি ব্রিকস, মেসার্স এমআরবি ব্রিকস, মেসার্স বিশ্বাস বিল্ডার্স এর বিশ্বাস ব্রিকস, মেসার্স এইচবি এস ব্রিকস, মেসার্স সোনালী ব্রিকস, অনাদি এন্ড নৌশি ব্রিকস, মেসার্স এইচএমবি ব্রিক ফিল্ড, মেসার্স লাকী ব্রিক ফিল্ড, মেসার্স আশরাফ উদ্দিন ব্রিকস, মেসার্স নিশাত ব্রিকস ফিল্ড, মেসার্স আমানত ব্রিকস, মেসার্স একতা ব্রিকস এন্ড ম্যানুঃ, মেসার্স এগারো সিন্দুর ব্রিক ফিল্ড, মেসার্স মামুন ব্রিকস,মেসার্স ক্বাদরী ব্রিক ফিল্ডস লিমিটেড,দি হেলেনা ব্রিকস ফিল্ড, মেসার্স তাল মাহমুদ ব্রিকস,মেসার্স তাজিম ব্রিক ফিল্ড, মেসার্স ভাই বোন ব্রিকস, মেসার্স মা ব্রিকস, মেসার্স রহমান ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচার,মেসার্স এস বি এইচ ব্রিক ফিল্ড, মেসার্স আর এম বি ব্রিকস,মেসার্স একতা ব্রিকস, মেসার্স এম.ই.বি ব্রিকস,মেসার্স এম বি কে ব্রিকস ও মেসার্স কাঞ্চনপুর ব্রিকস ফিল্ড।
পরিবেশ দূষণ ও অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে ইটভাটা মালিকরা জানান, ‘আমাদের ইটভাটা সম্পূর্ণ বৈধ। আপনার জানার থাকলে আমাদের ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতির সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নিন, আমরা কীভাবে ইটভাটা চালাচ্ছি’।
তবে কিশোরগঞ্জ জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি হাফেজ খালেকুজ্জামান বলেন, আমাদের সমিতির আওতাধীন কোনো ইটভাটা অবৈধ তালিকায় নেই। তবে যেগুলো অবৈধ তালিকায় আছে সেগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মমিন ভূইয়া বলেন, ‘অবৈধ ও পরিবেশসম্মত নয়– এমন ইটভাটা চলতে পারবে না। আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি। শিগগির অভিযান চালানো হবে।’
শিশুশ্রম বিষয়ে কিশোরগঞ্জ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক কামরুল হাসানের সঙ্গে ইটভাটায় শিশু শ্রম বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন- কিশোরগঞ্জে আমাদের অধিদপ্তরের ৯০টি ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া আছে। শিশু শ্রম ব্যবহার না করতে আমরা ইটভাটার মালিকদের নিয়ে কয়েকটি মিটিং করেছি। গত বছর শিশু শ্রম আইনে আমরা দুটি মামলা করেছি। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিবো।
কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত বলেন, অবৈধ ইটভাটা নিয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের দেয়া অবৈধ ইটভাটার তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আপডেট সংবাদ পেতে আলোকিত সমাচার পড়ুন, সংবাদটি শেয়ার করে সাথে থাকুন
আরো সংবাদ পড়ুন
Leave a Reply