নিজস্ব প্রতিবেদক
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানির অভাবে গবাদিপশু পালন ও সংসারের কাজকর্মও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রামের হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে, এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট এখন চরমে পৌঁছেছে। দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা ও পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কটিয়াদী উপজেলার বেথইর, গোয়াতলা, ঘাগৈর,পিপুলিয়া,বাহের পাথর, লাংটিয়া,উমেদপুর,বাঘবের গ্রামের এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অনেক টিউবওয়েল একদমই নষ্ট হয়ে গেছে।
সাধারণ মটর লাগানো হ্যান্ড টিউবওয়েলেও পানি উঠছে না। এ বছরের মার্চ মাসের শুরু থেকেই পানি ওঠা কমে গেছে। আর মার্চের মাঝামাঝি থেকে এই সমস্যা তীব্র হতে শুরু করেছে। পানির সংকটের কারণে সামর্থ্যবান অনেকেই বাড়িতে জল মোটর বসিয়ে নিচ্ছেন।
সরেজমিনে কটিয়াদী পৌরসভার ০৯ নং ওয়ার্ডের বেথইর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অনেকে টিউবওয়েলের সঙ্গে মোটর বসিয়েছেন। তবে সেখানেও পানির দেখা মিলছে না। অত্র গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, গত এক মাস ধরে পানির সমস্যা। একমাস আগে টিউবওয়েলের সঙ্গে মোটর বসিয়েছি, তাতেও পানি উঠছে না। এখন দূরের একটি মাঠের স্যালো মেশিন থেকে পানি আনতে হচ্ছে।
উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের পরিস্থিতিও একই। গ্রামটির অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। পানির সংকটের কারণে সংসারের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। লাংটিয়া গ্রামের পত্রিকা বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, এক জগ পানি তুলতে কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় লাগে। পানির সমস্যার কারণে গরু, ছাগল পালন নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে । আশপাশের পুকুর ও খালেও পানি নেই। এমন অবস্থায় আমরা খুব কষ্টে আছি।
কটিয়াদী পৌর এলাকার ঘাগৈর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মোফাসেল সরকার বলেন, পানির বড় সমস্যা চলছে। গ্রীষ্মকাল শুরু না হতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ, গ্রামে সুপেয় পানির জন্য নলকূপই শেষ ভরসা।
কটিয়াদী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির স্তর প্রতিবছর ১০ থেকে ১১ ফুট নিচে নামছে। ১০ বছর আগেও এই এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর পাওয়া যেত। অথচ এখন পানির জন্য যেতে হয় ৩০০ ফুটেরও বেশি গভীরে।
কটিয়াদী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, বাড়তি তাপমাত্রা ও সেচ দেওয়ার জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এ ভোগান্তির কারণ বলে মনে করছেন। ভূ-পৃষ্ঠীয় পানি বা সারফেস ওয়াটারের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে আগামীতে এ সংকট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা এই কর্মকর্তার।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমেছে। ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে হস্তচালিত অনেক টিউবওয়েল। তবে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Leave a Reply