মিজানুর রহমান
কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল এখন সোনালি রঙে রাঙানো। গত কয়েক বছরে ধান চাষ কমিয়ে কৃষকরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন, যেখানে উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি, এবং বন্যা কিংবা খরার ভয় নেই। এবারও ফলন হয়েছে বাম্পার। তবে দাম নিয়ে শঙ্খায় চাষীরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এই সোনালি ফসল।
রোদের ঝিকিমিকিতে হাওরের প্রান্তরে যেন মিটিমিটি হাসছে সোনালি ভূট্টার সারি। হাওরের অলওয়েদার সড়কের দুই পাশে দূর থেকে দেখলে মনে হয়—রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে একরাশ কাঁচা সোনা! কৃষক-কৃষাণীরা এখন ব্যস্ত তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে। কালের স্রোতে পাল্টে গেছে হাওরের কৃষকদের কৃষি চাষ। একসময় যেই জমিতে ধান আর বাদাম চাষ করতেন সেখানে এখন ভূট্টা চাষ হচ্ছে। এই অঞ্চলের কৃষকরা বরাবরই একটি ফসলের উপর নির্ভারশীল ছিলেন। বোরা আবাদ করে উৎপাদিত ধান বিক্রয়ের অর্থ দিয়ে চলতো সারাবছর। কিন্তু আগাম বন্যা ও অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ না পেলে খুব একটা লাভের মুখ দেখা যেতো না। বর্তমানে যখন দেশের পোল্ট্রি ও ফিড মিল খাতে ভুট্টার চাহিদা বেড়েছে, তখন তারা ধান ছেড়ে আগলে ধরেছেন ভুট্টার খুঁটি। কৃষকরা বলছেন, ভূট্টা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি। বন্যা-খরার ভয় নেই তেমন একটা। বর্ষা শুরুর আগেই ফসল ঘরে তোলা যায়। বর্তমানে বাজার দর কম থাকায় লাভের অংশে কিছুটা পতন দেখছেন তারা। আর পায়কাররাও মাঠ থেকেই কিনে নিচ্ছেন ভুট্টা মনপ্রতি ১ হাজার থেকে ১১’শ টাকায়।
এ বছর কিশোরগঞ্জে ১২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল যেখানে উৎপাদন ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ২১০ মেট্রিক টন। কিন্তু লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে ১২ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে হয়েছে আবাদ । খরচ কম ও লাভ বেশী হওয়ায় কৃষকরা ধান চাষ কমিয়ে ভূট্টা আবাদে ঝুঁকছেন বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.মোঃ সাদিকুর রহমান কিশোরগঞ্জ।
এই ভুট্টা অনেকটাই দূর করেছে রবি শস্য নিয়ে হাওরে নদী পাড়ের কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। উঁকি দিচ্ছে সম্ভাবনার নতুন ভোর। তবে বাজারজাতকরণে কৃষকের স্বার্থ নিশ্চয়তের তাগিদ। তবেই প্রকৃতপক্ষে কৃষকদের কাছে ভুট্টা হয়ে উঠবে এক জীবন্ত স্বপ্ন, এক আশার নাম কাঁচা সোনা।
Leave a Reply